গাছের পাতা যাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইরানপন্থী হোথি বিদ্রোহীদের দমন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আব্দু রাবু মানসুর হাদিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে ২০১৫ সালে মার্কিন সমর্থনে ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

এর আগে রাজধানী সানাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিলে রিয়াদে পালিয়ে গিয়ে সহায়তা চান হাদি। সৌদি জোটের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চরম মানবিক সংকট বিরাজ করছে দেশটিতে। সাম্প্রতিক সময়ে বন্দর অবরোধ করায় সে সংকট এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অবস্থা এতটাই খারাপ পর্যায়ে গেছে যে, কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষ শিক্ষা-চিকিৎসা তো দূরের কথা, খেতেও পারছে না। জীবন বাঁচাতে তাদের গাছের পাতা খেতে হচ্ছে। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

মার্কিন গণমাধ্যম এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমের হাজ্জাহ প্রদেশের আসলাম জেলার মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার। জীবন বাঁচাতে তাদের স্থানীয় ভাইন গাছের, আরবিতে যাকে বলে হালাস আর ইংরেজিতে বলে অ্যারাবিয়ান ওয়াক্স লিফ, পাতার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষ ক্ষুধা মেটাতে ওই গাছের পাতা তুলে এনে টক মিশিয়ে সিদ্ধ করে ভর্তা বা বড়া বানিয়ে খাচ্ছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, হাজ্জাহ প্রদেশের মধ্যে আসলাম জেলায় দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জানুয়ারিতে এখানে অপুষ্টিতে ভোগা ৩৮৪টি শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরের ছয় মাসে সে সংখ্যা ১ হাজার ৩১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসলাম জেলার প্রধান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ, বিদ্যুৎ, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং জেনারেটর চালানোর মতো কোনো জ্বালানি নেই।

মোবাইল হেলথ মিনিস্ট্রির ক্লিনিকে কাজ করা সালেহ আল-ফকিহ বলেন, ‘আসলাম হলো আরেকটি সোমালিয়া।’

আসলামের কাছের আল-মাশরাদা গ্রামের জাহরা, যার সাত মাস বয়সী মেয়ে শিশু রয়েছে, নিজেই অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাই তার সন্তানকে বুকের দুধ দিতে পারেন না।

এই জাহরাও তার পুরো পরিবারকে ওই হালাসের জাউ, সিদ্ধ করার পর নরম করে, খাওয়ান। তিনি তার মেয়ের ব্যাপারে বলছেন, ‘জন্মের দিন থেকেই তার জন্য দুধ কিংবা ওষুধ কেনার মতো কোনো অর্থ আমার হাতে নেই।’

আসলাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান মেকিয়া মাহদি বলছেন, ‘আমরা একুশ শতকে বাস করছি, অথচ আমাদের ওপর এ ধরনের যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

চলতি বছর হাজ্জাহ প্রদেশে খাবারের অভাবে অন্তত ২০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

হাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পুষ্টি শাখার প্রধান ওয়ালিদ আল-শ্যামশান বলছেন, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে এমন ১৭ হাজার শিশু পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছেনি সেখানে অপুষ্টিতে লোকজনের মৃত্যু হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর